প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্যরে ভূ-স্বগ নেত্রকোনা। জেলা শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার এবং ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের
মেঘালয় প্রদেশের সীমান্ত ঘেষে মন মুগ্ধকর পাহাড়ী পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা
দূর্গপুর উপজেলা। এই উপজেলায় বসবাস করে বিভিন্ন আদিবাসী গোত্রের মানুষ যেমন, গারো, হাজং, কোচ, বানাই, ঢালু জাতী গোষ্ঠী। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
আর অফুরন্ত খনিজ সম্পদের ভান্ডারও এই উপজেলা।
এক সময় ইতিহাস সমৃদ্ধ এই সুসং রাজ্যের রাজধানী ছিল দূর্গাপুর। আজ রাজাও নেই রাজ্যও নেই। তবে রয়েছে পর্যটকদের
আকর্ষণ করার মত অনেক কিছু। হাজং আদিবাসীদের টংক
আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ভারত উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত নেতা কমরেড মনিসিংহ এই দূর্গাপুরেই
জন্ম গ্রহন করেন। সেই সাথে বাংলাদেশে অবস্থিত ৭ টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মধ্যে ঢাকা
বিভাগের আওতায় দূর্গাপুরের এই কালচারাল একাডেমী নেত্রকোনার সংস্কৃতিতে অন্যতম অবদান
রেখে আসছে।
পাহাড়ী নদী সোমেশ্বরী, কংশ, বালিয়ারী, পাহাড়ী টিলা আকৃতিতে
বিজয়পুরে দেশের সর্ববৃহৎ চীনামাটির খনির পাশাপাশি বিরিশিরিতে ১৯৭৭ সনে তৎকালীন জিয়াউর রহমানের আমলে স্থাপিত উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী সংস্কৃতিমনাদের হাতছানি
দিয়ে ডাকে। ২০১১ সালে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে এটি জাতীয় সংসদ কর্তৃক
ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমী নামে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরিচালক সহ ১৭ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা একাডেমীটি পরিচালনা করেন। জেলা এবং জেলার বাইরে এ একাডেমী জাতীয় সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের পাশাপাশি আদিবাসী
সকল অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহন করে আসছে।
একাডেমীর পরিচালক জোতিন্দ্র সাংমা জানান, একাডেমীতে একটি অডিটরিয়াম ও গেষ্ট হাউসের আশু প্রয়োজন ছিল। সরকারী উদ্যোগে অডিটরিয়াম এবং গেষ্ট হাউসের কাজটিও হয়েছে। অডিটরিয়ামটি সম্পূর্ন হওয়ায় বড় পরিসরে প্রশিনের পাশাপাশি এতে আয়বর্ধন মূলক কার্যক্রম
চলবে। এতে করে এলাকার সংস্কৃতি যেমন বিকশিত হবে তেমনি সরকারী আয় বাড়বে।
কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্ভাবনাময় কালচারাল একাডেমীসহ সকল নৈশগ্রিক সৌন্দর্য
উপভোগ করতে পর্যটকদের আসার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও থেমে নেই আদিবাসী শিল্পীদের দ্বারা পরিচালিত একাডেমীর কার্যক্রম। বিরিশিরিতে যাওয়ার বাধা হিসেব প্রধান অন্তরায় ছিল শুকনাকুড়ি সেতু। দীর্ঘদিনের সমস্যাটিও এবার এমপি রুহীর হস্তক্ষেপে সমাধান হওয়ায় বিরিশিরির জাঁকজমকই
বেড়ে গেছে সম্পুর্ণ রূপে।
একাডেমীতে ২৭ জন শিক্ষার্থীকে নিজস্ব শিক দ্বারা প্রশিন দেয়া হয়। বাঙ্গালীদের অনুষ্ঠানেও এখন অংশ গ্রহন করছে এ একাডেমীর শিক্ষার্থীরা। এসকল শিল্পীরা জেলাশহর সহ বিভিন্ন উপজেলার শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ক আচার অনুষ্ঠানে
অংশগ্রহন করে। একাডেমীটি খ্রীষ্টমাস উৎসবসহ স্বাধীনতা
ও বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজসহ শরীর চর্চা প্রদর্শনীতেও অংশগ্রহন করে।
এছাড়া এ এলাকার গারোদের প্রধান উৎসব হচ্ছে ওয়ানগালা। তারা বেশ জাঁকজমকের সাথে এ অনুষ্ঠানটি পালন করে থাকে। হাজং সম্প্রদায়রা করে থাকে দেওলী উৎসব এবং কোঁচ
সম্প্রদায় বিহু উৎসব পালন করে থাকে।
তবে এ একাডেমীতে আদিবাসীসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরাও যদি শিক্ষা নিতে
পারে তাহলে এ পাহাড়, নদ-নদী, হাওর-বাওর, মনিষী আওলিয়া, আউল-বাউল, ময়মনসিংহ গীতিকা, লোকজ সংস্কৃতির তীর্থ ক্ষেত্রে আর ঐতিহাসিক ঘটনা ধারণ করে বিরল
ব্যাতিক্রমী ভূ-খন্ড নিয়ে দাড়িয়ে থাকা নেত্রকোনা বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এক মাইলফলক
ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সুধী মহল।